আখতার-উজ-জামান:
বাংলার ইতিহাসে নৃশংস ও ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ আগস্ট। দেশে দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
সেদিন রাজধানীর ৩২ নম্বরের সেই বাড়িতে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতাকে। তবে হত্যা করা যায়নি তার অবিনশ্বর চেতনা ও মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শকে। ঘাতকের সাধ্য ছিল না ইতিহাসের সেই মহানায়কের অস্তিত্বকে বিনাশ করার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশকেই হত্যা করতে চেয়েছিল, মুছে দিতে চেয়েছিল বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার সকল অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ়প্রত্যয়, বাঙালি জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শে সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের পরম আত্মীয়, শত বছরের ঘোর নিশীথিনীর তিমির বিদারী অরুণ, ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন সারথী।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নরপিশাচ খুনিরা জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়।
জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে ২০১০ সালে ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালন করেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করছে জাতীয় শোক দিবস।
বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু যখনই এই বিধ্বস্ত দেশটিকে সুন্দরভাবে সাজানো-গোছানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে পুরো পরিবারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যেই মানুষটি মায়ের ভাষার আন্দোলন আর স্বাধীনতার রূপকার সেই মানুষটিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এই দেশেরই ঘাতকরা। তারা কি একবারও চিন্তা করলো না যে, এই মানুষটির বেঁচে থাকার কথা; আর আজকে গৌরবময় বাংলাদেশের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের কথা। দেশের উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে যাক, যেমনটি চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে কাজগুলো করে যাছেন তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু নেই আজ এই বাংলায়; কিন্তু বাংলার রূপকারের উন্নয়নের ছোঁয়া আর দেশমাতৃকার ভালোবাসাই বুঝিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালির হৃদয়মাঝে এখনো বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন।
আর জাতির জনকের ওই নির্মমভাবে পুরো পরিবারকে হত্যার সময় মহান আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় এখনো বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধুর দুই মেধাবী কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসামপ্ত উন্নয়ন কার্যক্রম রেখে যাওয়া বাকি কাজগুলো নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন এই মহান নেতার সাহসী ও ত্যাগী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক: সাংবাদিক